অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : ভারত ও কানাডার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি শুরু হয়ে এখন এই বিরোধের প্রভাব দেশদুটির ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ও বিনিয়োগের উপরেও ছায়া ফেরতে পারে।
কানাডার একজন শিখ নেতাকে হত্যার পিছনে নয়াদিল্লির হাত ছিল এমন অভিযোগকে কেন্দ্র করে এই বিরোধের শুরু হয়েছিল।
মুম্বাই থেকে এএফপি জানায়, গত বছর কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো প্রকাশ্যে সেদেশের ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যায় ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ করার পর ভারত এই ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়। নিজ্জাকে ২০২৩ সালের জুনে ভ্যাঙ্কুভারে তার বাড়ির কাছে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সংক্ষিপ্তভাবে কানাডিয়ানদের জন্য ভিসা বন্ধ করে দেয় এবং অটোয়াকে বেশ কয়েকজন কূটনীতিক প্রত্যাহার করতে বাধ্য করে।
সম্পর্ক ধীরে ধীরে উন্নত হয়েছে, কিন্তু এই সপ্তাহে উভয় পক্ষই একে অপরের শীর্ষ দূত এবং অন্যান্য কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে।
কোনো পক্ষই পিছু হটতে প্রস্তুত নয় – ট্রুডো সোমবার ভারতের আচরণকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে উল্লেখ করেছেন, অপর দিকে নয়া দিল্লি অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ বলে অভিহিত করেছে-একটি দীর্ঘায়িত কূটনৈতিক ফাটল অবশেষে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করতে পারে।
নতুন দিল্লি-ভিত্তিক গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের অজয় শ্রীবাস্তব এক সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই বিরোধটি যখন চলছে, তখন উভয় দেশকে সম্পূর্ণরূপে প্রসারিত অর্থনৈতিক পতন এড়াতে সাবধানতার সাথে তাদের ক্রিয়াকলাপ পরিচালনা করতে হবে।
বাণিজ্য: কানাডার সাথে ভারতের বাণিজ্য নয়াদিল্লির সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদারদের তুলনায় ছোট, কিন্তু তা ক্রমাগত বাড়ছে।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের মতে, ২০১৯ এবং ২০২৩ অর্থবছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক পণ্য বাণিজ্য ৬.৩৬ বিলিয়ন ডলার থেকে ৮.২৭ বিলিয়ন ডলার হয়েছে এবং ২০২৪ সালের অর্থবছরে ৮.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। এখনও পর্যন্ত এটি ঝড়কে সামলিয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
কানাডায় ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানির মধ্যে রয়েছে ওষুধ, ইস্পাত ও লোহার পণ্য এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি।
অপর দিকে নয়াদিল্লির কানাডিয়ান সারের উপর নির্ভরতা রয়েছে।
শ্রীবাস্তব এএফপিকে বলেন, ‘আমি অবিলম্বে বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে মনে করি না।’
‘উভয় দেশের কোম্পানিই তাদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে রপ্তানি ও আমদানি করে। ভারত বা কানাডা কেউ যদি কিছু অংশে বাণিজ্য নিষিদ্ধ না করে, তাহলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।’
তবে কূটনৈতিক বিরোধ একটি মুক্ত-বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য দেশদুটির প্রচেষ্টাকে সাহায্য করার সম্ভাবনা কম।
প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়ে আলোচনা গত বছর স্থগিত রাখা হয়েছিল, তবে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানের আগে কোনও পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা দূরবর্তী বলে মনে হয়।
বিনিয়োগ: ভারত বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতি এবং কানাডা সেদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ১৭তম স্থানে রয়েছে।
নয়া দিল্লির পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রনালয় জুন মাসে জানিয়েছে, কানাডিয়ান পেনশন তহবিল ভারতে প্রায় ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
কানাডা পেনশন প্ল্যান ইনভেস্টমেন্ট বোর্ডের বর্তমানে ফুড ডেলিভারি অ্যাপ জোমাটো এবং বেসরকারি খাতের ঋণদাতা কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্কের মতো কোম্পানিগুলোতে এক শতাংশের বেশি অংশীদারিত্ব রয়েছে।
শিল্প সমিতির অনুমান, শীর্ষ আইটি জায়ান্ট টিসিএস এবং ইনফোসিসসহ ভারত-ভিত্তিক কোম্পানিগুলো বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে কানাডায় হাজার হাজার চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
বিমান নির্মাতা বোম্বারডিয়ারসহ শীর্ষ কানাডিয়ান সংস্থাগুলোতেও ভারতে প্রবল উপস্থিতি রয়েছে।
ভারতীয় ধনকুবের গৌতম আদানি সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, তিনি বোম্বার্ডিয়ারের প্রধান এরিক মার্টেলের সাথে বিমান পরিষেবা এবং প্রতিরক্ষায় ‘রূপান্তরমূলক অংশীদারিত্ব’ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ছাত্র: কানাডায় আন্তর্জাতিক ছাত্রদের দুই-পঞ্চমাংশেরও বেশি ভারত থেকে আসে, সিএআরই রেটিং অনুযায়ী তৈরি করা অনুমান থেকে দেখা যায়, তারা শিক্ষা খাতে বার্ষিক ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রাখে।
শিক্ষার্থীদের আগমনের এই ধারায় কতটা ক্ষতি করতে পারে তা দেখার বিষয়।
ভারত থেকে কানাডিয়ান স্টাডি পারমিটের আবেদন গত বছর প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এটি কমতে শুরু হয়েছিল।
তবে এজন্য অন্যান্য কারণও অবদান রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে দুর্বল চাকরির বাজার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য কানাডার কঠোর নীতিমালা।
Leave a Reply